স্টাফ রিপোর্টার : তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জুলাই আন্দোলনে রাজপথের শহীদ ইমতিয়াজ আহমেদ জাবিরের পিতাকে শারিরিক ভাবে লাঞ্চিত করেছে স্থানীয় একদল দূর্বৃত্ত। গতকাল বুধবার রাতে যশোরের শার্শা উপজেলার জামতলা বাজারে এই হামলার শিকার হন শহীদ জাবিরের পিতা ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নওশের আলী। লোকলজ্জার ভয়ে প্রথমে তিনি বিষয়টি চেপে গেলেও পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতৃবৃন্দের নজরে আসলে তা ফাঁস হয়ে যায়। খবরটি দ্রুত মিডিয়া কর্মীদের মাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলেই পৌঁছে যায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের কর্ণকুহরে। তাৎক্ষনিক জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্রীমতি ভূপালী সরকার এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ বাবলুর রহমান দ্রুত শহীদ জাবিরের পিতার সাথে কথা বলতে ছুটে যান ঝিকরগাছার বাঁকড়া ইউনিয়নের দেউলী গ্রামে। ভিকটিম নওশের আলীর সাথে মোবাইলে কথা বলেন নাভারণ সার্কেলের এএসপি নিশাদ আল নাহিয়ান । তারা শহীদ জাবিরের পিতার কাছ থেকে ঘটনাটি শুনে তাৎক্ষনিক থানায় মামলা হিসেবে ঘটনাটি রেকর্ড করেন এবং অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিতে পুলিশী অভিযান শুরু করেন বলে ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ বাবলুর রহমান খান জানান।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শার্শার জামতলা বাজারে ব্যবসা করেন শহীদ জাবিরের চাচতো ভাই মিন্টু বিশ্বাসসহ ২/৩ ভাই। গত কয়েকদিন ধরে সামটা গ্রামের কতিপয় দূর্বৃত্ত সেই সব দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছিলো। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে সামটা গ্রামের খোরমেদ আলীর ছেলে শরিফুল খোদা বক্সের ছেলে খোরশেদ ও শাহাজাহান, ওসমান আলীর চেলে মোকাব্বের, নজরুলের ছেলে মোছানুর, আনোয়ারের ছেলে মাসুদ ও মোশারফ হোসেনের ছেলে রাসেল এবং দেউলী গ্রামের বাবু ও চয়নসহ ১৪/১৫ জনের একটি দল জামতলা বাজারের মিন্টু বিশ্বাসের দোকানে চড়াও হয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করার চেষ্টা করে। ওই মার্কেটের দোকানীরা এগিয়ে গেলে বড় আকারের গন্ডগোল বাঁধে। এক পর্যায়ে চাঁদাবাজদের হাতে মিন্টু বিশ্বাসসহ কয়েকজন দোকানী আহত হন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চাঁদাবাজ চক্রটি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বিষয়টি বাঁগআচড়া পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জকে অবহিত করলেও তিনি তা আমলে নেননি। গতকাল বিকেলে এই বিষয়টি মীমাংসার লক্ষ্যে স্থানীয় বাজার কমিটি এক শালিসী বৈঠকের আয়োজন করে। সেই বৈঠকের মধ্যেই ফের ওই চাঁদাবাজ চক্র মিন্টু বিশ্বাসকে মারপিট করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। খবর পেয়ে ৩৬ জুলাই আন্দোলনে ঢাকার রাজপথের শহীদ নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ জাবিরের পিতা নওশের আলী সঙ্গীয় কয়েকজন গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে পার্শ্ববর্তী জামতলা বাজারে ভাইপোর দোকানে যান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ামাত্রই শহীদ জাবিরের পিতা নওশের আলীকে ওই চাঁদাবাজ চক্র কিলঘুষি মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে চাঁদাবাজ চক্রটি নওশের আলীর গায়ের জামাটি পর্যন্ত টেনে ছিড়ে ফেলে। এ ঘটনায় উপস্থিত লোকজন হতবিহব্বল হয়ে পড়েন। অনেকেই হয়ে পড়েন কিংকর্তব্যবিমুঢ়। পরিস্থিতি এক পর্যায়ে বড় আকার ধারন করলে স্থানীয় বাজার কমিটি ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ চাঁদাবাজ চক্রের কবল থেকে নওশের আলীকে উদ্ধার করে স্থানীয়দের সহায়তায় বাড়ি পৌছে দেন। লোক লজ্জার ভয়ে এবং মানসম্মান রক্ষার্থে ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নওশের আলী ঘটনাটি চেপে যান। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে স্যোসাই মিডিয়ায় ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির প্রতিনিধিদের নজরে আসে বিষয়টি। এক পর্যায়ে গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাটি জানতে পারেন এবং জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেন। প্রশাসন তাৎক্ষনিক বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে এবং ভিকটিমের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার অফিসার ইনচার্জ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দেউলি গ্রামে শহীদ জাবিরের বাড়িতে যান এবং শহীদ জাবিরের অসুস্থ পিতার সাথে কথা বলেন। খবর পেয়ে বাকড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাজী মিজানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দও দেউলী গ্রামে যান এবং এই ঘটনাটি মুনে তাৎক্ষনিক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে এই হামলা মারপিটের সাথে জড়িত চাঁদাবাজ চক্রকে আটকের দাবি জানান। এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি ঘটনাটি কিছুক্ষন আগেই লোকমারফত শুনছেন। তিনি ঢাকায় অবস্থান করার কারনে উপজেলা বিএনপি এবং বাঁকড়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দকে শহীদ জাবিরের বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। তিনি এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, যারা এই জঘন্যতম ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদেরকে নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। এই বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন আইন অনুযায়ী যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে আমি অবিলম্বে তাদেরকে আটকের এবং বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুর ই আলম চৌধুরী বলেন, এই ঘটনা শোনা মাত্রই পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা তাৎক্ষনিক ঘটনার শিকার শহীদ জাবিরের পিতার সাথে যোগাযোগ করেছি। তার কাছ থেকে সবিস্তারে শুনে সে মোতাবেক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। একই সাথে শহীদ জাবিরের পিতার দেখানো মতে ইতিমধ্যে দুইজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিঙ্গাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সাথেও কথা হয়েছে । আমাদেরকে এই বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পুলিশ সুপার মহোদয় কড়া নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, এই ঘটনার সাথে জড়িতদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।
শিরোনাম:
- যশোর সদর উপজেলা মহিলা দলের সভা অনুষ্ঠিত
- যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার হাসিবের অবহেলায় প্রাক্তন নার্সিং সুপারভাইজারের মৃত্যুর অভিযোগ
- যশোরের শার্শার জামতলা বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জুলাই আন্দোলনের শহীদ জাবিরের পিতাকে মারপিট করেছে একদল চাঁদাবাজ দূর্বৃত্ত
- রাইটস যশোরের উদ্যোগে মানব পাচার থেকে উদ্ধার প্রাপ্তদের নিয়ে জীবন দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন
- ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিইএব) যশোরে মতবিনিময় সভায় জিয়াউর রহমান মানুষের ভোটাধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন- অমিত
- যশোরের দুঃখখ্যাত ভবদহ জলাবদ্ধ সমস্যার স্থায়ী সমাধানেরপথ খুঁজছে সরকার – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
- কয়লা ব্যবসার নামে প্রতারণার অভিযোগ প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার যশোর ডিবি পুলিশের অভিযানে
শনিবার, এপ্রিল ২৬