স্টাফ রিপোর্টার ঃ পানি সম্পদ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভবদহ সমস্যা একদিনে তৈরী হয়নি। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিগত সরকার গুলো শটকার্ট রাস্তায় এই সমস্যার সমাধানের পথ খুজেছেন। কিন্তু তাতে কোন সফলতা আসেনি। কেবল মাত্র সরকারী অর্থের অপচয় হয়েছে। বর্তমান সরকার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজছে। স্থানীয় ভূক্তভোগীমহলের সাথে কথা বলে বাস্তব অভিঙ্গতা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ টিম দ্বারা বেইজ লাইন সার্ভের মাধ্যমে এই সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্যই সরকার কাজ করছে। আজকের এই পরিদর্শনের লক্ষ্যই হচ্ছে সরেজমিনে এই সমস্যার রাস্তা খুজে তা তেকে বের হওয়ার রাস্তা বের করা। সেই জন্যই আমরা তিন জন উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই ভবদহ পাড়ে এসেছ্ িসরেজমিনে সমস্যা ও তার সমাধানের রাস্তা বের করতে প্রশাসনের সাথে এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে কাজ আরম্ভ করতে চাই। আর অতীতের মতো অর্থ রুটপাট প্রতিরোধে এবারের কাজটি আপনাদের চাহিদা মোতাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দিয়েই করানো হবে। আপনাদের দায়িত্ব হবে সেনাবাহিনীকে সর্বাত্নক সহায়তা করা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে যশোরের ভবদহ কলেজ মাঠে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং এ এসব কথা বলেন পানি সম্পদ এবং বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এসময় স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লে: জেনারেল (অব:) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম , খুলার বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার, পুলিশের ডিআইজি রেজাউল হক, যশোর সেনানীবাসের ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ইমদাদুল হক, যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম , পুলিশ সুপার মিস. রওনক জাহান, ডিডিএলজি রফিকুল হাসানসহ বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন শেষে বিকাল ৩টায় যশোর জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষ অমিত্রাক্ষর ও সনেটে তিন উপদেষ্টা পৃথক পৃথক মতবিনিময় করেন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ, বন ও জলবালয়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অবঃ) সকাল ১০টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে অবতরণ করেন। এরপর সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি টিম, স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ভবদহবাসীদের প্রতিনিধি দলের সাথে নওয়াপাড়া সরকারী ডিগ্রি কলেজ অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। সভা শেষে স্থানীয় মাঠে কৃষকদের সাথে নিয়ে ধানকাটা কর্মসূচী উদ্বোধন করেন উপদেষ্টাগণ। পরে গাড়িবহর নিয়ে উপদেষ্টারা ভবদহ ২১ ভেল্ট স্লুইস গেট পরিদর্শন করেন। পরে ভবদহ কলেজ মাঠে অপেক্ষারত গণমাধ্যম কর্মীদের ব্রিফ করেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, আমাদের সরকারের স্বল্প মেয়াদী পদক্ষেপের কারনে এবছর ভবদহ সংলগ্ন বিল গুলোর ২০ হাজার হেক্টর জলাবদ্ধ জমির মধ্যে এবছর ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা সম্ভব হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামীতে আরো বেশি জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সেটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। বর্তমান সরকার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের রক্ষ্যেই কাজ করছে। এই অঞ্চলের মানুষের জনভোগান্তি লাঘবে আগামিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহনে সেনাবাহিনীর প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী সরেজমিনে জায়গা পরিদর্শন ও মতামত গ্রহন করতেই এই পরিদর্শন। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে এলাকার জনগন ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতবৃন্দের সাথে কথা বলে আমরা মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য ফেরোনোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তারজন্য আমডাঙ্গা খাল থেকে ভভাটিতে ১২০ কিলোমিটার নদী খনন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এর পাশাপাশি ভবদহ সংলগ্ন বিভিন্ন বিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খাল গুলোও ড্রেজিং করে সেখানে নাব্যতা সৃষ্টি করা হবে। যার ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে যাতে করে এই জনপদ প্লাবিত না হয়।
ভবদহ পাড়ের মানুষ না হলেও ভবদহের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন বামনেতা ও ভবদহ সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিক পটপরিবর্তনের পর পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি সেসময় বলেছিলেন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবদহের স্থায়ী সমাধান হবে। সেই অনুযাযী ভবদহ এলাকার আমডাঙ্গা খাল খননের টেন্ডার শুরু হয়েছে। আমাদের দীর্ঘদিনের যে দাবি ছিলো সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি সরানো বন্ধ করা। সেই জায়গায় স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু। সমমিলিয়ে ত্রাণ, কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার এই আগমনে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পে নামে যারা লুটপাট করেছে, তাদেরও বিচার দাবি করছি। উপদেষ্টারা ভবদহ এলাকা পরিদর্শন, সেনাবাহিনীর নকশা অনুযায়ী স্থানগুলো চিহ্নিত করন ও স্থানীয় জনগণের মতামতের উপর ভিত্তি করেই আগামীতে ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের রক্ষ্যে কাজ মুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরে বিকেলে যশোর কালেক্টরেট ভবনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সনেট সম্মেলন কক্ষে মুক্তিযোদ্ধা বিষয় মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ও ডিসির অফিস রুমে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা পৃথক পৃথক ভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধান, জেলা প্রশাসন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার সাথে মতবিনিময় করেন। এসব সভায় গণমাধ্যম কর্মীরাও অংশ গ্রহণ করেন। প্রতিটি মতবিনিময় সভায় দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অর্থ রুটপাট বন্ধ, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিতকরন ও তাদের বিচারের মুখোমুখি করা, পতিত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগের সকল ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর প্রতিরোধ মুলক ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিবেশ রক্ষায় নদী ও খাল খনন ও সংস্কার, বিগত ফ্যাসিষ্ট ও তাদের দোসরদের চিহ্নিত করে বয়কট করা, তাদের বিরুদ্ধে নমত গড়ে তোলা এবং ৩৬ জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের প্রকৃত তালিকা তৈরীসহ তাদের সার্বিক মুল্যায়নের খুটিনাটি দিক নিয়ে উপদেষআগণ আলোচনা করেনও মতামত প্রদান করেন। বিশেস করে যশোরে হোটেল জাবের ইন্টার ন্যাশনালে ৫ আগষ্ট সংঘটিত অগ্নিকান্ডে নিহতদের ৩৬ জুলাই আন্দোলনে শবীদদের তালিকায় স্থান দেওয়ায় মুক্তিযোদ্দা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আযম ক্ষোভ ও বিষ্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যারা পতিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে রাজপথে পুলিশের গুলিতে বা অন্য কোন আক্রমনকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন তারা প্রকৃত শহিদ। আর যারা আহত হয়েছিলেন তারা জুলাই সংগ্রামী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। কিন্তু যারা ান্য কোন প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে যশোরের একটি হোটেলে ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে যাওযার পরে আওয়ামীলীগ নেতার হোটেলে অগ্নিকান্ডে নিহত হয়েছেন তারা ৩৬ জুলাই আন্দোলনের শহিদ হিসেবে বিবেচিত হতেই পারে না। তাদেরকে অন্যভাবে মুল্যায়ন করা যেতে পারে। তিনি অবিলম্বে শহিদের তালিকার গেজেট থেকে যশোরের জাবের হোটেলে অগ্নিকান্ডে নিহতদের নাম প্রত্যাহারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
একই সাথে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরী করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও উপদেষ্টা উপস্থিত সবাইকে আশ্বস্ত করেন।
শিরোনাম:
- যশোর সদর উপজেলা মহিলা দলের সভা অনুষ্ঠিত
- যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার হাসিবের অবহেলায় প্রাক্তন নার্সিং সুপারভাইজারের মৃত্যুর অভিযোগ
- যশোরের শার্শার জামতলা বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জুলাই আন্দোলনের শহীদ জাবিরের পিতাকে মারপিট করেছে একদল চাঁদাবাজ দূর্বৃত্ত
- রাইটস যশোরের উদ্যোগে মানব পাচার থেকে উদ্ধার প্রাপ্তদের নিয়ে জীবন দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন
- ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিইএব) যশোরে মতবিনিময় সভায় জিয়াউর রহমান মানুষের ভোটাধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন- অমিত
- যশোরের দুঃখখ্যাত ভবদহ জলাবদ্ধ সমস্যার স্থায়ী সমাধানেরপথ খুঁজছে সরকার – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
- কয়লা ব্যবসার নামে প্রতারণার অভিযোগ প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার যশোর ডিবি পুলিশের অভিযানে
শনিবার, এপ্রিল ২৬
যশোরের দুঃখখ্যাত ভবদহ জলাবদ্ধ সমস্যার স্থায়ী সমাধানেরপথ খুঁজছে সরকার – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
Related Posts
Add A Comment